Friday, April 17, 2020

সমাজে নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্মহার বৃদ্ধির নেপথ্য কারণ…



রাস্তার পরিত্যক্ত কুত্তিগুলো যখন গর্ভবতী হয়, তখনো কুড়িয়ে একবেলার খাবার জোটাতে পারলে আরেক বেলা আদৌ খাবার পাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা থাকে না। তারপরও কুকুরের পেট থেকে কখনো অসুস্থ কিংবা প্রতিবন্ধী বাচ্চার জন্ম হয় না! সেখানে মানুষের জন্য চারপাশে এতো সব ভালো খাবার, অত্যাধুনিক হাসপাতাল, বিদেশে প্রশিক্ষিত ডাক্তার ও দেশি-বিদেশি ওষুধের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরেও মানুষের পেট থেকেই কেন প্রায়শ শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী বাচ্চার জন্ম হচ্ছে?!?
পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি হাজারে ১২৩টি প্রতিবন্ধী বাচ্চা জন্ম নিচ্ছে। আশংকা করা হচ্ছে- জীবনযাপনের ভুলগুলো সন্মিলিতভাবে সংশোধন করা না হলে এই সংখ্যাটা বাড়তে বাড়তে কোনো এক সময়ে ৯৯৯-এ পৌঁছে যেতে পারে! তখন কে যে কার সেবা করবে, বলা মুশকিল!
আজকাল অনেকের তো আবার বাচ্চাই হচ্ছে না! আপনার আত্মীয়-স্বজন ও কাছের বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে খোঁজ নিলেই জানতে পারবেন- নিঃসন্তান দম্পতির সংখ্যা আশংকাজনকভাবে বেড়ে গেছে। আমার পরিচিত এক ডাক্তার দম্পতি চিকিৎসা-গবেষণায় সবচেয়ে এগিয়ে থাকা বিশ্বের একটি সেরা দেশে বসবাস করেন। বিয়ের সাড়ে নয় বছর হতে চললেও তাঁরা এখনো নিঃসন্তান! কিন্তু কেন? কিসের অভাব তাঁদের?!? কেন এমনটা অহরহ ঘটছে- কেউ কি তার নেপথ্য কারণ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছেন?
অতিমাত্রায় ধর্মবিশ্বাসীরা হয়ত বলবেন, আল্লাহ্ সুস্থ বাচ্চা না দিলে অথবা কোনো বাচ্চা না দিলে কারই-বা কী করার আছে? কিন্তু আমার প্রশ্ন- সর্বশক্তিমানের সঙ্গে আমাদের বিশেষ কোনো বিরোধ চলছে নাকি? আগেকার আমলে চিকিৎসাবিজ্ঞান যখন এতো উন্নত ছিল না, তখন যদি আঁতুড়ঘরে গ্রাম্য দাইয়ের হাতেই সুস্থ বাচ্চার জন্ম হতে পারে, তাহলে এখন কেন হবে না?
সন্তান না হওয়ার সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কৃত্রিম পন্থায় সন্তান ধারণের বুদ্ধি বাৎলে দেবেন (অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা ব্যবসায়িক ধান্দাবাজি)! আর শারীরিক প্রতিবন্ধী বাচ্চা জন্ম নেওয়ার পর ডাক্তারের কাছে গেলে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে নানা ওষুধ দিয়ে ও প্রয়োজনে অপারেশন করে নবজাতকের শারীরিক ত্রুটি সারানোর চেষ্টা করবেন (যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেটা সম্ভব হয় না)। আর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী হলে তো তেমন কিছুই করণীয় থাকে না। এই সব ত্রুটিযুক্ত সন্তান শুধু পরিবার নয়, সমাজের জন্যও বোঝাস্বরূপ।
বিষয়টি নিয়ে আমি অনেক দিন ধরেই উদ্বিগ্ন। বহুকাল ধরে এ বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা ও পড়াশুনা করে বোঝার চেষ্টা করছি- সন্তান না হওয়ার অথবা প্রতিবন্ধী বাচ্চা জন্ম হওয়ার প্রকৃত কারণ কী হতে পারে?!? সুদীর্ঘ পর্যবেক্ষণে আমি বেশ কিছু কারণ খুঁজে পেয়েছি। আজকের লেখায় সে বিষয়গুলোই আলোকপাত করব।
প্রসঙ্গত বলা দরকার- আমি প্রাতিষ্ঠানিক সনদপ্রাপ্ত কোনো চিকিৎসক বা চিকিৎসাবিজ্ঞানী নই; স্রেফ একজন সুস্বাস্থ্য গবেষক। সৃষ্টির সূচনালগ্নের মতোই প্রাকৃতিক নিয়মে কিভাবে সুস্থভাবে জীবনযাপন করা যায়- এ বিষয়ে পড়াশুনা করে জানা, বোঝা ও শেখার চেষ্টা করি মাত্র। আমার চিন্তা-ভাবনার সঙ্গে সবাইকে একমত হতেই হবে- এমন কোনো বাধ্যবাধকতা নেই (আমি আমার পর্যবেক্ষণগুলো বিস্তারিত তুলে ধরব; একমত হওয়া না হওয়া তো পাঠকের বিবেচনা)। উৎসাহী কোনো চিকিৎসাবিজ্ঞানী এই আলোচনা থেকে নতুন গবেষণা বা চিন্তার খোরাক খুঁজে পেলে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন বলেই গণ্য হবে।
সবার আগে আমাদেরকে বুঝতে হবে- সুস্থ বাচ্চা জন্ম হওয়ার পূর্বশর্তগুলো কী কী? আপনি যদি কল-কারখানায় সেরা মানের পণ্য উৎপাদন করতে চান, সেক্ষেত্রে কারখানার যন্ত্রপাতি উন্নতমানের হতে হবে। সেই মেশিনের নিয়মিত যত্ন-আত্তি লাগবে যেন প্রত্যেকটি যন্ত্রাংশ নিখুঁতভাবে কাজ করে। সর্বোপরি কাঁচামাল হতে হবে সর্বোচ্চ ভালো মানের। একই কথা মানবসন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
সুস্থ বাচ্চা পয়দা করতে হলে মা-বাবাকে শারীরিক ও মানসিকভাবে থাকতে হবে পরিপূর্ণ সুস্থ, সবল ও স্বাভাবিক (এর বাইরে হাজার কোটি টাকার মালিক কিংবা কোনো দেশের রাজা হলেও ফায়দা নেই)- যেটা এখনকার সময়ে যথেষ্ট দুর্লভ! ভুল জীবনদৃষ্টির এবং না জেনে, ও না বুঝে দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর ধরে উল্টাপাল্টা খাবার খেয়ে তথাকথিত ডিজিটাল জীবনযাপনে অভ্যস্থ হয়ে উঠলেও আসল জায়গায় ধরা খেয়ে বসে আছি! উপরে উপরে আমরা মানবদেহের কাঠামোটা মোটামুটি ধরে রাখতে পারলেও ভেতরে ভেতরে ছাড়খাড় হয়ে গেছেন অনেক তরুণ-তরুণী। অনেকে তাঁদের অজান্তেই ভবিষ্যতে পিতা-মাতা হতে পারার সক্ষমতা পুরোপুরি অথবা আশিংক হারিয়ে ফেলেছেন!
বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশ তরুণ-তরুণীর দৃষ্টিভঙ্গি সঠিক অবস্থানে নেই। আচার-আচরণে নতজানু নয়, বরং অনেকেই আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করেন এবং তাঁদের প্রতিদিনকার কাজে-কর্মে তার প্রতিফলন লক্ষ্যণীয়। সবাই কেমন জানি অস্থির সময় পার করছেন। যান্ত্রিক জীবনে মন খুলে কথা বলার মতো কারো এতটুকু ফুসরত নেই! সবকিছুতেই কেমন জানি বাণিজ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা-চেতনা দৃশ্যমান। নিশ্চয় জানেন : মন+হুঁশ= মানুষ। এখনকার মানুষের না আছে মন, না আছে হুঁশ। ভাববেন একটা, কিন্তু করবেন আরেকটা- সেই কাজে বরকত আসবে কোত্থেকে?!?
নতুন প্রজন্মের জীনযাপনের সবচেয়ে বড় ভুল ক্রমাগত রাত জাগা। সবকিছুর স্রষ্টা আল্লাহ্ সুবহানুতায়ালা পবিত্র কোরআন শরীফে স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন- রাতকে বিশ্রাম আর দিনকে পরিশ্রমের (কাজের) জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু আমরা অধিকাংশ মানুষ (বিশেষত নবপ্রজন্ম) প্রকৃতির এই বিধান থেকে অনেকখানি দূরে সরে গেছে। অনেকে রাত জেগে কাজ করা, সিনেমা দেখা, মুঠোফোনে সস্তায় ঘণ্টারপর ঘণ্টা কথা বলা, নিদেনপক্ষে সামাজিক গণমাধ্যমে সময় কাটানোকে বাহাদুরি মনে করেন। কিন্তু আপনি কি জানেন- মাঝরাতের আগের দুই ঘণ্টার ঘুম পরের চারঘণ্টার ঘুমের চাইতেও বেশি উত্তম? কিভাবে এবং কেন উত্তম- সেটা আগে ব্যাখ্যা করছি…।
মানবদেহকে সচল ও সক্রিয় রাখার জন্য দেহের ভেতরে ক্রমাগত লক্ষ-কোটি কর্মযজ্ঞ সংঘটিত হতে থাকে। কিছু খেলাম আর শরীর সেখান থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করে বাকিটুকু বর্জ্য (মলমূত্র, ঘাম ও নিঃশ্বাস আকারে) হিসেবে শরীর থেকে বের করে দিলো; ওদিকে ইচ্ছেমতোন ঘুমিয়ে শরীরের ক্লান্তি দূর করে আবার কর্মক্ষম হয়ে উঠলাম- ব্যাপারটা বলা যত সহজ, দেহের ভেতরে সবকিছু তত সহজে ঘটে না বা ঘটানো যায় না। একজন মানুষকে বেঁচে থাকার পুরোটা সময় জুড়ে প্রতিমুহূর্তে সারা শরীরে কম-বেশি ১০০ ট্রিলিয়ন কোষ একইসঙ্গে সক্রিয় থাকে। এর মধ্যে আবার ভাঙা-গড়ার খেলাও চলে। মানে কিছু কোষ নির্ধারিত সময়ে নির্ধারিত কাজ শেষ করে মারা যায় এবং সেই স্থান দখল করে সদ্য জন্ম নেওয়া নতুন কোষ।
মানবদেহের সু-বি-শা-ল কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দেয় মস্তিষ্ক আর কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিতে জ্বালানীর যোগানদাতা হলো পেট বা পাকস্থলি (মানে খাদ্য হিসেবে যা কিছু গ্রহণ করি)। স্থান-কাল-পাত্র ভেদে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী খাপ খাইয়ে নিতে মানবদেহের ভেতরে বাইরে প্রতিনিয়ত অনেক কিছু ঘটে চলেছে, যার অনেকগুলোর ব্যাপারে আমাদের কোনো সুস্পষ্ট ধারণাও নেই। যেমন : মানদেহে অনেক ধরনের হরমোন তৈরি ও প্রয়োজন অনুযায়ী নিঃসৃত হয়। এগুলোর হেরফের হয়ে গেলে মানবদেহের সর্বনাশ হয়ে যেতে পারে।
মানবদেহের দু’টি অতীব দরকারি হরমোন হলো মেলাটোনিন ও কর্টিসোল। এ দু’টি হরমোন দেহে তৈরি হয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিঃসৃত হয়। কিন্তু তার জন্য তিনটি শর্ত অপরিহার্য- ১. সময়টা হতে হবে মধ্যরাত (মানে রাত ১২টার আশেপাশে; এই সময়ের আগে-পরে এই হরমোন নিঃসৃত হয় না), ২. ওই সময় মানুষটাকে (মানে যার শরীরে নিঃসৃত হওয়া প্রয়োজন) গভীর ঘুমে অচেতন থাকতে হবে (জেগে থাকলে অথবা ঘুম গভীর না হলে এই হরমোন নিঃসৃত হবে না) এবং ৩. মানুষটা যেখানে ঘুমিয়ে থাকবে, সেই জায়গাটা অন্ধকারাচ্ছন্ন থাকতে হবে অর্থাৎ আলো জ্বলতে পারবে না।
ধরা যাক- আপনি রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়ে মাঝরাত নাগাদ গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়লেন, কিন্তু আপনার জীবনসঙ্গী/সঙ্গিনী সেই ঘরে আলো জ্বালিয়ে টেলিভিশন দেখছেন অথবা মুঠোফোনে কারো সঙ্গে চ্যাটিং করছে (অর্থাৎ সামান্য হলেও আলোর ঝলকানি আছে- এমন পরিবেশে আপনার শরীরেও ওই রাতে আর মেলাটোনিন ও কর্টিসোল নিঃসৃত হবে না! এভাবে এক-দু’ রাত কাটলে, এমনকি এই অনিয়ম সপ্তাহ পেরিয়ে মাসাধিকাল ধরে চললেও মানবদেহে খুব বড় প্রভাব পড়ে না। কিন্তু অনিয়মটা যখন লম্বা/দীর্ঘ সময় ধরে (হতে পারে কয়েক বছর) চলতে থাকে, তখনি শরীরে তার বিরূপ প্রভাব পড়ে। দেহের আভ্যন্তরীণ সিস্টেম হচপচ হয়ে যায়। এ রকম ছেলে অথবা মেয়ে যখন পরবর্তীতে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়, তখন আর সন্তানের জন্ম দিতে পারে না অথবা প্রতিবন্ধী (অপূর্ণাঙ্গ) বাচ্চার জন্ম দেয়!
দুঃখজনক হলো, সুস্থ বাচ্চা জন্ম দিতে না পারা অথবা কোনো সন্তানই জন্ম দিতে না পারার প্রকৃত কারণগুলোর দিকে কেউ দৃষ্টি ফেরাচ্ছেন না। সবাই ব্যস্ত যার যার ব্যবসায়িক ধান্দা নিয়ে। মুঠোফোন আর বিনোদন মাধ্যমগুলো কেবলমাত্র দিবাভাগের ব্যবসা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়, তাদের চাই রাতভর ব্যবসা। ফলে রাত যত গভীর হয়, মুঠোফোন আর ইন্টারনেট-এর রেট তত কমতে থাকে… লেট নাইটে টেলিভিশনে আকর্ষণীয় সব অনুষ্ঠানাদি প্রচার করা হয়। এসবের কুপ্রভাবে কোটি কোটি মানুষ যে দেহের স্বাভাবিকত্ব হারাতে বসেছেন- সে খবর কেউ রাখছেন না! রাখবে কিভাবে, অধিকাংশ মানুষ তো প্রকৃত কারণ জানেই না এবং জানার চেষ্টাও করে না (সব দোষ ভাগ্যের ওপরে চাপিয়ে দিয়ে বসে থাকে)। যারা অনেক টাকার মালিক, তারা উপযুক্ত চিকিৎসার সন্ধানে এক দেশ থেকে আরেক দেশের হাসপাতালগুলোতে ঘুরে ঘুরে বেড়ান (যদিও খুব বেশি ফায়দা হয় না)।
এবারে বলব সমাজে নিঃসন্তান দম্পতি ও প্রতিবন্ধী শিশু জন্মহার বৃদ্ধির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। আজকাল রাস্তায় বের হলেই দেখবেন- নারী পুরুষ সবাই ফ্যাশানের নামে কে কত খাটো আর টাইট পোশাক পরতে পারে, তার প্রতিযোগিতায় নেমেছে! পুরো হাত উদোম করে না রাখলে আর উরু না দেখালে কারোরই যেন ভালো লাগে না! শালীনতাবোধ থেকে সবাই কেমন জানি দূরে সরে গেছেন।
বিখ্যাত পত্রিকা ‘হাফিংটন পোস্ট’-এর এক নিবন্ধে বলা হয় : নিয়মিত skin tight jeans পরলে উরুর বাইরের দিকের নার্ভ-এ ক্রমাগত চাপ পড়ে এবং এর ফলে অনুভূতিহীনতা হতে পারে। Cosmopolitan পত্রিকায় প্রকাশিত আরেক নিবন্ধে বলা হয় : আঁটোসাঁটো জিন্স কুঁচকি, পায়ের ধমনী ও নার্ভগুলোকে সংকুচিত করে রেখে পায়ের নিম্নাংশে রক্ত চলাচল ব্যহত করে। পায়ের পেশী স্থায়ীভাবে জখম হয়ে গেলে পা ফুলে যাওয়া ও অনুভূতিহীনতা হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের চর্ম বিশেষজ্ঞ Josh Zeichner বলেন, খুব আঁটোসাঁটো পোশাক পরলে ত্বকের সঙ্গে বারবার ঘর্ষণে ত্বকের নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্থ হয়। আঁটোসাঁটো পোশাকে মানুষ অনেক বেশি ঘামে এবং ঘাম ভাইরাস, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রামণের জন্য পরিবেশ তৈরি করে দেয়! বিশেষ করে অন্তর্বাস শরীরের সঙ্গে লেপ্টে থাকে। ঘাম হলে অন্তর্বাস মানুষের যৌনাঙ্গ ও পায়ুপথের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়। পরিণামে মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্ত ও যোনিদেশ সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যায়।
ফিটিং পোশাক পাকস্থলির ওপরেও অতরিক্ত চাপ ফেলতে পারে। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে : আঁটোসাঁটো জিন্স পরলে অন্ডকোষে মোচড় লেগে তীব্র ব্যথার উদ্রেক করতে পারে। পুরুষের শুক্রাণু উৎপাদনের জন্য স্বাভাবিক তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড- যা দেহের তাপমাত্রার চেয়ে ৫ ডিগ্রি কম। সেজন্যই মূল দেহ গহ্বরের বাইরে ঝুলন্ত অন্ডথলিতে এর অবস্থান।
নিয়মিত টাইট জিন্স পরলে অন্ডথলি দেহের সঙ্গে লেপ্টে থাকতে বাধ্য হয়। ফলে দেহের তাপমাত্রা দিয়ে প্রভাবিত হয়ে শুক্রাণু উৎপাদন ব্যহত করে। এই অবস্থা দীর্ঘদিন চলতে থাকলে পুরুষের বন্ধ্যাত্ব হতে পারে! টাইট প্যান্ট পেটে ঊর্ধ্বচাপ দিলে পাকস্থলির অম্ল খাদ্যনালীতে উঠে গিয়ে বুক জ্বালারও কারণ হতে পারে। সুতরাং ফ্যাশান করে কখনো ফিটিং পোশাক পরবেন না। ইসলামী ড্রেস কোডের মূল নীতিই হলো- পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেহের আকার-অবয়ব যেন বোঝা না যায় (ফুটে না থাকে)।
শারীরিক গঠনের কারণে মহিলাদের প্রস্রাবের রাস্তা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা এমনিতেই বেশি। প্রস্রাবের রাস্তা সংক্রামণের ৮০% ঘটনা ঘটে মূলত Escherichia coli ও Staphylococcus saprophyticus নামক ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণে। সমজাতীয় ব্যাকটেরিয়া Klebsiella ও Proteus থাকে মানুষের নাড়িভুঁড়িতে (colon)- যারা বিশেষ কোনো ক্ষতির কারণ নয় (বরং মল থেকে পুষ্টি নেয় আর মানবদেহের জন্য ভিটামিন তৈরি করে), কিন্তু স্ব-জায়গা ছেড়ে ঘটনাচক্রে প্রস্রাবের নালীতে ঢুকে পড়লেই সর্বনাশ (রীতিমতো সন্ত্রাসী কর্মকান্ড) ঘটিয়ে ফেলে!
Staphylococcus saprophyticus বাস করে যোনিপথে, কিন্তু প্রস্রাবের রাস্তায় ঢুকলেই বড়সড় ঝামেলা বাঁধিয়ে বসে থাকে। মহিলাদের মলদ্বার, যোনিদ্বার ও মূত্রদ্বারের অবস্থান খুব কাছাকাছি (মাত্র দেড় সেন্টিমিটারের মধ্যে) হওয়ায় উল্লেখিত ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াগুলোর পক্ষে সংক্রামণ ঘটানো খুবই সহজ ব্যাপার (পুরুষদের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব প্রায় ১৫ সেন্টিমিটার বলে সংক্রামণের ঝুঁকি তুলনামূলক কম)।
আবার মহিলাদের প্রস্রাবের নালী মাত্র ৪ সেন্টিমিটার (পুরুষদের ক্ষেত্রে যেটা ২০ সেন্টিমিটার)। ফলে জীবাণু মাত্র ৪ সেন্টিমিটার পথ অতিক্রম করতে পারলেই ব্লাডার ইনফেকশনের কারণ হতে পারে আর ব্লাডার আক্রান্ত হলে কিডনি সংক্রামিত হওয়াও সময়ের ব্যাপার মাত্র! সুতরাং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে রোগাক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, তার ওপরে সর্বদা আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস পরে থাকলে ঘাম হলে জীবাণুদের সাঁতার কাটার পথ আরো সুগম হয়!
আশংকাজনক খবর হলো- আজকাল মেয়েদের প্রস্রাবের সংক্রামণ এমন সব জীবাণু দ্বারা হচ্ছে, যা কিনা উচ্চমাত্রার (High power) সর্বাধুনিক এন্টিবায়োটিক দিয়েও সারানো যাচ্ছে না। মারাত্মক এই সমস্যার সমাধান করা না গেলে ভবিষ্যতে গর্ভধারণেও সমস্যা হতে পারে! এমতাবস্থায় অল্প বয়স্কা মেয়েদেরকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে- তাঁরা কি skin tight jeans পরে ফ্যাশানের পেছনে ছুটবেন নাকি ঢিলেঢালা আরমদায়ক পোশাক পরে রোগমুক্ত থাকার চেষ্টা করবেন? রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা করানোর পরিবর্তে রোগ প্রতিরোধ করাটাই বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয় কি?!?
অস্ট্রেলিয়ার Skin Cancer Foundation-এর চর্ম বিশেষজ্ঞ Dr. Peter Gies বলেন, আমাদের দেহের সকল অনাবৃত স্থানে ক্রমাগত সূর্যের আলো লাগলে ত্বকের দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি হয়। শুধু তাই নয়, ত্বক দ্রুত বুড়িয়ে যেতে পারে। সে কারণে ত্বক যত ঢেকে রাখা যায়, ততই ভালো। পোশাকের কাপড় সাদা বা হালকা রঙের না হয়ে গাঢ় হলে অতি বেগুনীরশ্মি বেশি মাত্রায় শোষণ করে। এসব কারণে Dr. Peter Gies সব সময় হালকা রঙের নরম ও আরামদায়ক কাপড় দিয়ে তৈরি, বাতাস চলাচল করে- এমন ঢিলেঢালা ফুলহাতা পোশাক (breathable), যা কিনা শীতলতা দিতে পারে এবং অতি বেগুনীরশ্মি থেকে বেশি সুরক্ষা দেয়- এমন পোশাক পরার পরামর্শ দিয়েছেন। মহানবী (সা.)-এর সুন্নাহ্’র নির্দেশনাও প্রায় একই রকমের। মহানবী (সা.) নিজে কখনো হাফহাতা পোশাক পরেছেন- এমন তথ্য পাওয়া যায় না (রেকর্ড নেই)।
ঢিলেঢালা পোশাক পরলে ত্বক ও পোশাকের মধ্যে যে বাতাস চলাচল করে, তা বাইরের তাপমাত্রার সঙ্গে সমন্বয় করে মানবদেহকে প্রয়োজন অনুসারে শীতল অথবা উষ্ণতার অনুভূতি দেয়। একবার ফিনল্যান্ড সেনাবাহিনীর শীতকালীন পোশাক কেমন হওয়া উচিত- তার ওপরে গবেষণা চালানো হয়। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গবেষক দল যে পোশাকটি নির্বাচন (প্রস্তাব) করেন, সেটি আগেরটির তুলনায় বেশি ঢিলেঢালা। গবেষকেরা বলেন, ত্বক ও পোশাকের মধ্যে বাতাসের স্তর যত পুরু হবে, তত তাপ ও বাষ্প পরিবহন বাড়বে। ফলে পোশাক পরিধানকারী তুলনামূলক বেশি স্বস্তিবোধ করবেন।
সাম্প্রতিক এক গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে- সর্বদা দুই স্তরবিশিষ্ট পোশাক পরিধান করলে ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। অথচ মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ১৪০০ বছর আগেই তা পালন করে বিশ্ববাসীর সামনে নিদর্শন রেখে গেছেন। আদর্শ পোশাকের রঙ প্রসঙ্গে বলা হচ্ছে : সাদা অথবা হালকা রঙের পোশাক সবচেয়ে কম সূর্যরশ্মি শোষণ করে। সে কারণে কেউ সাদা অথবা হালকা রঙের পোশাক পরিধান করলে তাকে দেখতে উজ্জ্বল লাগে, আবার মেজাজ-মর্জিও ঠান্ডা (কোমল) থাকে। মহানবী (সা.) বলেছেন : ‘তোমরা সাদা রঙের পোশাক পরিধান করো। কেননা তা অধিক পবিত্র ও উত্তম।’ তিনি নিজেও বেশিরভাগ সময় সেলাইবিহীন লুঙ্গি ও চাদর পরিধান করতেন (হজ্বযাত্রীরা যেমন পোশাক পরে থাকেন)।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন : নবীজী (সা.) একটি কামিজ পরতেন, যার ঝুল তাঁর টাখনুদ্বয়ের ওপর পর্যন্ত আর হাতা হাতের আঙুল পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মহানবী (সা.)-এর সকল ঘনিষ্ঠ সাহাবীদের কামিজের ঝুলও ছিল টাখনু পর্যন্ত লম্বা। তাঁর জীবনসঙ্গিনী হযরত আয়েশা (রা.) একবার একখানা চাদর ও মোটা লুঙ্গি বের করে সাহাবীদের দেখিয়ে বলেন : এ দু’টি পরিহিত অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর রূহ কবজ করা হয়।
প্রসঙ্গক্রমে পুরুষের বন্ধ্যাত্বের বিষয়ে আলোকপাত করে এই নিবন্ধের ইতি টানতে চাই। চিন্তা করে দেখুন- ১০ বছরে ধরে কেউ কেউ সস্ত্রীক ডাক্তারের চেম্বারে চেম্বারে ঘুরছেন… হোমিওপ্যাথি, আয়ুর্বেদ, হারবাল, কিছুই বাদ দেননি, কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না! অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর ডাক্তারের শেষ কথা- আপনার স্ত্রীর কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু আপনার স্পার্ম কাউন্ট কম!
সকল স্তন্যপায়ী প্রাণীর অন্ডকোষ শুরুতে পেটের ভেতরেই থাকে; যথাসময়ে টেনে নামিয়ে দেওয়া হয় দেহের বাইরে। কারণ শুক্রাণু তৈরির জন্য দেহের ভেতরের তাপমাত্রার তুলনায় ২ ডিগ্রি তাপমাত্রা কম লাগে। এ কারণে দেহের ভেতরে অনেক জায়গা ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও অন্ডকোষ বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি সারাজীবন টাইট জিন্স বা গ্যাবার্ডিন বা আঁটোসাঁটো পোশাক পরে অন্ডকোষকে সব সময় শরীরের সঙ্গে লেপ্টে রেখে তাপমাত্রা গায়ের সমান করে রাখেন তো পরিণামে শুক্রাণু উৎপাদনের ক্ষমতাই যাবে কমে। তখন আর হায় হায় করলে ফায়দা হবে কি?!?
Copy from 

0 comments:

Post a Comment