ধ্যান একটি অনুভুতি!
ধ্যান করার জন্য হাজার রকমের নিয়ম আছে, আর হাজার মার্গ(পথ) দিয়ে লোকজন ধ্যান উপলব্ধি করতে পারবে। নিশ্চল ধ্যান বা ইয়োগা পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য হাজার রকমের রাস্তা আছে, আর পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের রাস্তায় চলে লোকজন সেই মুহূর্তকে উপলব্ধি করছে, যাকে আমরা বলে থাকি মন স্থির হয়ে যাওয়া।
একটি ছোট প্রক্রিয়ার কথা আমি আপনাকে বলবো: যা অনেক সহজ সরল আপনি করতে পারবেন, আর আপনার নিশ্চল(স্থির) মনের ঝলক এবং ছায়ার দেখা শুরু হয়ে যাবে; তখন আপনার জীবন রুপান্তর হওয়া শুরু হয়ে যাবে।
একটি নতুন মানুষের জন্ম হবে আপনার ভিতরে, পুরাতন মানুষ ধীরে ধীরে ধ্বংস হতে থাকবে, আর একটি নতুন চেতনা, একটি নতুন কেন্দ্র, দেখার নতুন একটি দৃষ্টি, বাঁচার নতুন একটি প্রক্রিয়া; আপনার হওয়ার একটি নতুন ব্যবস্থা, আপনার ভিতর জন্ম হয়ে যাবে।
যেমন হঠাৎ অন্ধ চোখে দেখতে পায়, বা যেমন হঠাৎ বধির(শ্রবণশক্তিহীন) কানে শুনতে পায়, বা যেমন হঠাৎ করে কোন মৃত ব্যক্তি পুনরায় জীবিত হয়ে যায়। ঠিক ধ্যানের অনুভব থেকে এমনি ব্যাপক ক্রান্তিকারী(বিপ্লবের) ঘটনা চেতনার ভিতর ঘটে যায়।
যদি আপনি এমন কোন চিত্র দেখে থাকেন যখন বাচ্চা মায়ের গর্ভে থাকে, মায়ের পেটে বাচ্চা যে অবস্থায় থাকে গর্ভে; সেই অবস্থাকে মনোবিজ্ঞান এবং ধ্যান বা ইয়োগা গভীর খোঁজ বলে: যখন মায়ের গর্ভে বাচ্চা থাকে যে আসনে, সেই সময় বাচ্চার কাছে ন্যূনতম মন থাকে, না থাকার মত, এটাও বলতে পারি তখন মন থাকেই না।
আর বাচ্চার চেতনা মস্তিষ্কের ক্যানভাসে থাকে না, যখন মায়ের পেটে থাকে, আর না বাচ্চার চেতনা হৃদয়ে থাকে। হয়তবা আপনার জানা নাও থাকতে পারে, মায়ের পেটে যখন বাচ্চা থাকে তখন বাচ্চার হৃদয় স্পন্দন করে না; নয় মাস বাচ্চার হৃদয় স্পন্দন ছাড়া থাকে।
এর জন্য আরো একটি বিষয় মনে রাখবেন, হৃদয়ের স্পন্দনের সাথে জীবনের কোন সম্পর্ক নেই, কারণ মায়ের গর্ভে বাচ্চা নয় মাস হৃদয়ের স্পন্দন ছাড়া জীবিত থাকে। জীবন আরো গভীর বিষয়! চেতনা যখন বোধগম্য থাকে তখন হৃদয় কেন্দ্রীক থাকে, আর চেতনা যখন বিচার বিশ্লেষণ করে তখন মস্তিষ্ক কেন্দ্রীক থাকে।
কিন্তু মস্তিষ্ক অনেক পরে বিকশিত হয়, আর হৃদয় নয় মাস পরে স্পন্দন(ধক-ধক) করে। তার আগে চেতনার একটি কেন্দ্র থাকে সেটা হলো নাভি, বাচ্চা মায়ের নাভির সাথে জুড়ে(একত্রিত) থাকে। জীবনের প্রথম অনুভব বাচ্চার নাভির উপর হয়। যারা মনের ওপারে যেতে চায়, তাদেরকে হৃদয় এবং মস্তিষ্ক দুটো থেকে নেমে এসে নাভির কাছে পুনরায় ফিরে আসতে হয়।
যদি আপনি পুনরায় আপনার চেতনা নাভির কাছে অনুভব করতে পারেন, তাহলে আপনার মন তাৎক্ষণিক স্থির হয়ে যাবে। এই ধ্যানের প্রক্রিয়াকে, যাকে আমি নিশ্চল ধ্যান ইয়োগা এর একটি ব্যবস্থা বলছি।
দুইটি বিষয় মনে রাখা জরুরী। যেমন সুফি ফকিরদের যদি আপনি দেখে থাকেন প্রার্থনা করতে,বা মুসলমানদের যদি আপনি নামায পড়তে দেখে থাকেন; তাহলে তারা যেভাবে হাটু ভাজ করে বসে, ঠিক সেইভাবে হাটু ভাজ করে বসে যান।
বাচ্চা মায়ের গর্ভে ঠিক তেমনিভাবে হাটু ভাজ করে থাকে। চোখ বন্ধ করে শরীরকে হালকা ভাবে ছেড়ে দেন আর শ্বাস-প্রশ্বাসকে সম্পূর্ণ শিথিল ভাবে ছেড়ে দেন, কারণ শ্বাস-প্রশ্বাস যত ধীর গতিতে আসা যাওয়া করবে তত ভালো।
শ্বাস-প্রশ্বাস যেন শান্ত হয়ে যায়, শ্বাস-প্রশ্বাসকে জোর করে দাবিয়ে শান্ত করা যাবে না; যদি আপনি শ্বাস-প্রশ্বাস আটকাতে চান তাহলে দ্রুত গতিতে শ্বাস-প্রশ্বাস চলা শুরু হয়ে যাবে, শ্বাস-প্রশ্বাস আটকাবেন না শুধু হালকা ভাবে ছেড়ে দেন।
আর চোখ বন্ধ করে আপনার চেতনাকে নাভির কাছে নিয়ে আসুন। মস্তিষ্ক থেকে নামিয়ে হৃদয়ের কাছে নিয়ে আসুন, আর হৃদয় থেকে নামিয়ে নাভির কাছে চেতনাকে নিয়ে আসুন!
শ্বাস-প্রশ্বাসের হালকা কম্পন পেটকে উপর-নিচ করবে। আপনি চোখ বন্ধ করে আপনার ধ্যানকে সেখানে নিয়ে আসুন যেখানে নাভি কম্পিত হচ্ছে।
শ্বাস-প্রশ্বাসের ধাক্কার কারণে পেট উপর-নিচ হতে থাকবে, চোখ বন্ধ করে ধ্যানকে সেখানে নিয়ে আসুন আর শরীরকে হালকা ভাবে ছাড়তে থাকুন কিছুক্ষণের মধ্যে শরীর আপনার সামনের দিকে ঝুকে যাবে আর মাথা মাটির সাথে লেগে যাবে।
যখন আপনার মাথা মাটির সাথে লেগে যাবে তখন আপনি ঠিক সেই অবস্থায় এসে পড়েছেন যে অবস্থায় বাচ্চা মায়ের পেটে থাকে। শান্ত হওয়ার জন্য এর থেকে বেশি দামি আসন জগতে আর কোথাও নেই।
আসন এমন হয়ে যায় যেমন বাচ্চা গর্ভে থাকে, আর আপনার ধ্যান যেন নাভির কাছে চলে যায়। বাচ্চার ধ্যান এবং চেতনা নাভির কাছে থাকে। ঠিক তেমনি আপনার ধ্যান যেন নাভির কাছে চলে যায়।
অনেকবার ধ্যান নষ্ট হয়ে যাবে, কোথাও থেকে কোন আওয়াজ আসলে ধ্যান নষ্ট হয়ে যাবে, যদি বাহিরে কোথাও কিছু না হয় তাহলে ভিতরে কোন বিচার এসে উপস্থিত হবে আর ধ্যান সরে যাবে; তখন তার সাথে লড়াই করবেন না।
যদি ধ্যান সরে যায় তাহলে কোন চিন্তা করবেন না, যখনি খেয়াল আসবে যে ধ্যান সরে গেছে তখন পুনরায় ধ্যানকে নাভির কাছে নিয়ে আসবেন। আর চল্লিশ মিনিট অন্ততপক্ষে এর থেকে বেশি যে কোন লোক থাকতে পারবে।
ঠিক মায়ের পেটে বাচ্চা যেমন পরে থাকে, সেভাবে পরে থাকবেন। বেশি সম্ভাবনা এটা যে- আট থেকে দশ দিনের প্রয়োগে আপনার ভিতরে গভীর নিশ্চল অনুভব হওয়া শুরু হয়ে যাবে। ঠিক আপনি বাচ্চার মত সরল চেতনায় প্রবেশ করবেন। তখন মন স্থির হয়ে গেছে বুঝতে পারবেন, যতক্ষণ মন নাভির কাছে থাকবে ততক্ষণ মন স্থির থাকবে। আর যখন নাভির কাছে থাকা সহজ হয়ে যাবে তখন মন সম্পূর্ণভাবে স্থির হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি যত বেশি তার চেতনাকে নিয়ে নাভির কাছে যাবে, ততই বর্তমানের খুব কাছাকাছি থাকবে। যেমন বাচ্চা নাভির সাথে জুড়ে থাকে মায়ের সাথে, ঠিক তেমনি একটি অজানা নাভির সঙ্গে আমরা অস্তিত্বের সাথে জুড়ে রয়েছি। নাভি হলো অস্তিত্বের দরজা।
যেমন আমরা মায়ের সাথে জুড়ে থাকি এই ভৌতিক শরীরের সাথে, ঠিক এমনিভাবে এই বড় জগৎ, এই প্রকৃতি বা এই অস্তিত্বের গর্ভের সাথে আমরা নাভির মাধ্যমে জুড়ে থাকি। যখনি আপনি নাভির নিকট আপনার চেতনাকে নিয়ে আসেন তখন মন নিশ্চল হয়ে যায়।
যীশু(আঃ) এর একটি অদ্ভুত বচন আছে, যদি ঈসায়ীরা তার অর্থ বুঝতে পারত। যীশু(আঃ) বলেছিল: তুমি তখনি আমার প্রভুর স্বর্গরাজ্যে প্রবেশ করতে পারবে যখন তুমি ছোট বাচ্চার মত হয়ে যাবে।
কিন্তু বাহ্যিক অর্থে আমরা বুঝেছি ছোট বাচ্চার মত সরল হয়ে যাওয়াকে। কিন্তু গভীর বিজ্ঞান মতে এর অর্থ হলো: আমরা বাচ্চার সেই অন্তিক(নিকটস্হ) অবস্থায় পৌঁছিয়ে যাব, যখন বাচ্চা থাকে না শুধু মা থাকে, আর বাচ্চা মায়ের সাহায্যে বেঁচে থাকে, তখন বাচ্চার নিজস্ব কোন হৃদয়ের স্পন্দন(ধক-ধক) থাকে না, আর না নিজের কোন মস্তিষ্ক থাকে। বাচ্চা সম্পূর্ণ সমর্পণ হয়ে মায়ের অস্তিত্বের অঙ্গ হয়ে থাকে। ঠিক এমনি ঘটনা নিশ্চল ধ্যান বা ইয়োগা অবস্থায় ঘটে, আপনি সমাপ্ত হয়ে যান আর পরমাত্মা সাথে একত্রিত হয়ে থাকেন; তখন পরমাত্মার মধ্যে আপনি বেঁচে থাকেন।
আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করে” "আমার কথা গুলো এত প্রেম ও শান্তি সঙ্গে পড়েছেন, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ প্রকাশ করছি, কেননা এই ধরনের কথা বার্তা প্রেমও শান্তির সঙ্গে পড়া অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে। এবং শেষে সকলের ভেতরে পরমাত্মাকে ভক্তিও শ্রদ্ধা করছি, আমার ভক্তি ও শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন দয়া করে!
"Translation" By monju miah" "Respect" "By" Osho(Ah)”
0 comments:
Post a Comment