Monday, June 29, 2020

এক নজরে গোপালগঞ্জ

প্রশাসনিক কালপঞ্জিঃ
মধুমতির কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে আজকের গোপালগঞ্জ শহর। প্রাচীনকালে এ এলাকাটি বঙ্গ অঞ্চলের অন্তর্গত ছিল। সুলতানী ও মোঘল যুগে এ অঞ্চল হিন্দু রাজারা শাসন করতেন। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের (১৭৯৩) সময় গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলা ছিল যশোর জেলার অন্তর্গত আর বাকী অংশ ছিল ঢাকা-জালালপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত। ১৮০৭ সালে মুকসুদপুর থানা যশোর থেকে ফরিদপুর জেলার সাথে যুক্ত হয়। ফরিদপুর জেলার একটি পরগনার নাম ছিল জালালপুর। গোপালগঞ্জ সদর ও কোটালীপাড়া জালালপুর পরগনাভুক্ত ছিল। ১৮১২ সালে চান্দনা (মধুমতি) নদী যশোর ও ঢাকা-জালালপুর জেলার বিভক্ত রেখা হিসেবে নির্ধারিত হয়। গোপালগঞ্জ-মাদারীপুর এলাকা ছিল বিশাল জলাভূমি। এখানে নৌ-ডাকাতির প্রকোপ ছিল বেশী। এজন্য বাকেরগঞ্জ থেকে বিভাজিত হয়ে ১৮৫৪ সালে মাদারীপুর মহকুমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৮৭২ সালে মাদারীপুর মহকুমায় গোপালগঞ্জ নামক একটি থানা গঠিত হয়। ১৮৭৩ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে বাকেরগঞ্জ জেলা থেকে ফরিদপুর জেলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ১৯০৯ সালে মাদারীপুর মহকুমাকে ভেঙ্গে গোপালগঞ্জ মহকুমা গঠন করা হয়। গোপালগঞ্জ এবং কোটালীপাড়া থানার সঙ্গে ফরিদপুর মহকুমার মুকসুদপুর থানাকে নবগঠিত গোপালগঞ্জ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
গোপালগঞ্জের প্রথম মহকুমা প্রশাসক ছিলেন জনাব সুরেশ চন্দ্র সেন। ১৯১০ সালে মহকুমা প্রশাসকের বেঞ্চ কোর্ট ফৌজদারি কোর্টে উন্নীত হয়। ১৯২১ সালে গোপালগঞ্জ শহরের মানে উন্নীত হয়। আদমশুমারি অনুযায়ী তখন গোপালগঞ্জ শহরের লোকসংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৪ শত ৭৮ জন মাত্র। ১৯২৫ সালে গোপালগঞ্জে সিভিল কোর্ট চালু হয়।
১৯৩৬ সালে মুকসুদপুর থানা বিভক্ত হয়ে কাশিয়ানী থানা গঠিত হয়। ১৯৭৪ সালে গোপালগঞ্জ সদর থানাকে ভেঙ্গে টুঙ্গিপাড়া নামক একটি থানা গঠন করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি গোপালগঞ্জ মহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়। গোপালগঞ্জ জেলার প্রথম জেলা প্রশাসক ছিলেন জনাব এ. এফ. এম. এহিয়া চৌধুরী।
বর্তমানে গোপালগঞ্জ জেলা ০৫ টি উপজেলা, ০৫ টি থানা, ০৪ টি পৌরসভা, ৬৮টি ইউনিয়ন এবং ৬৫৩ টি মৌজা নিয়ে গঠিত। বর্তমানে জনাব শাহিদা সুলতানা, জেলা প্রশাসক হিসেবে কর্মরত আছেন।
এ জেলার উত্তরে ফরিদপুর জেলা, দক্ষিণে পিরোজপুর ও বাগেরহাট জেলা, পূর্বে মাদারীপুর ও বরিশাল জেলা এবং পশ্চিমে নড়াইল জেলা অবস্থিত ।
গোপালগঞ্জের নামকরণঃ কলকাতার জ্ঞানবাজারনিবাসী প্রীতিরাম দাস ১৮০০ খ্রিষ্টাব্দে অনুর্বর অসমতল মকিমপুর পরগনা (বর্তমান বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার আওতায়) জমিদারী তৎসময়ে ঊনিশ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করেন। তার দ্বিতীয় পুত্র রাজচন্দ্র দাস ১৮০৪ খ্রিষ্টাব্দের ২১ এপ্রিল মাহিষ্য বংশীয় মেয়ে রাসমনিকে বিয়ে করেন। জমিদার রাজচন্দ্র তার স্ত্রী রানী রাসমনি ও তাঁর বিবাহিত তিন মেয়েকে রেখে ১৮৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ৯ জুন মাত্র ৪৯ বৎসর বয়সে মারা যান। জমিদার রাজচন্দ্র ও রাসমনির কোন পুত্র সন্তান ছিলনা। চার কন্যার মধ্যে প্রথম কন্যা পদ্মমনির বিয়ে হয় রামচন্দ্রের সাথে। তাঁদের মহেন্দ্র নাথ, গনেশচন্দ্র, সৌদামিনী, সুভদ্রা, বলরাম, কালী এবং সতীনাথ নামে সাতটি সন্তান জনম হয়। প্রথম পুত্র মহেন্দ্র নাথ অকালে মৃত্যুবরণ করেন। ফলে জীবিত বয়েজ্যেষ্ঠ পুত্র গনেশ জমিদার হন। খাটরা এস্টেটের প্রজারা রানীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে খাটরা এস্টেটের রাজগঞ্জ বাজারের নাম বদল করে রানীর নাতি তথা গনেশের একমাত্র পুত্র নব গোপালের নামানুসারে রাখতে চান। নব গোপালের নামের "গোপাল " ও রাজগঞ্জের "গঞ্জ" এই মিলিয়ে গোপালগঞ্জ নামকরণ করা হয়।

0 comments:

Post a Comment