Wednesday, November 25, 2020

প্রকৃত সুখ

 একবার এক রেডিও সাক্ষাৎকারে একজন ধনী মানুষের কাছে জানতে চাওয়া হলো- এই যে আপনি এতো ধনী হয়েছেন। বলুননতো -আপনি কোন সময় সত্যিকারের সুখ অনুভব করেছেন।

সুখের চারটি ধাপ আমি পেরিয়ে এসেছি। কিন্তু শেষ ধাপে এসে আমি প্রকৃত সুখের মর্মার্থ অনুধাবন করতে পারি। প্রথম ধাপে আমি প্রচুর ধনসম্পদের মালিক হলাম। বেশ ভালো লাগলো। কিন্তু যে সুখের সন্ধান আমি করছিলাম-সেটা যেন ঠিক পাচ্ছিলাম না। দ্বিতীয় ধাপে-আমি দেশ বিদেশ থেকে নানা রকমের মূল্যবান বিলাসবহুল জিনিসপত্র সংগ্রহ করলাম এবং বুঝতে পারলাম-এগুলোর ক্ষয় হয়, বিনাস হয়, সময়ের সাথে সাথে রঙ বিবর্ণ হয়। ৩য় ধাপে এসে বিশ্ববিখ্যাত রিসোর্টের মালিকানা লাভ করলাম। কিন্তু এতো প্রাপ্তি আর এতো ভোগ বিলাসের মাঝেও কোথায় যেন একটা শুণ্যতা রয়ে গেলো। সুখ আর শান্তি কোনটাই যেন ঠিক পাচ্ছিলাম না।
একদিন প্রচন্ড শীত। ট্রাফিক লাইটে গাড়িতে বসে সুবজ লাইটের অপেক্ষায় আছি। ড্রাইভার গাড়ি চালাচ্ছে। দেখি, এরকম তীব্র শীতে রাস্তার পাশে মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে একটা ছেলে।

মায়ের হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকা এই ছোট ছেলেটির চাহনি যেন আমার বুকের ভিতরটা নাড়িয়ে দিয়ে গেলো। ড্রাইভারকে বললাম- রাস্তার পাশে গাড়িটা দাঁড় করাতে। মায়ের শরীরে আমার হাতাওয়ালা জ্যাকেটটা জড়িয়ে দিলাম । গাড়িতে নিজের বাচ্চাদের শীতে পরার জন্য উষ্ণ কাপড় ছিলো। ব্যাগটা ছেলেটির হাত দিয়ে -ব্যাগের আরেকটি জামা ওকে পরিয়ে দিলাম।

এই অল্পক্ষণেই আমি শীতে জমে যাচ্ছি। কনকনে বাতাস গায়ে লাগলেই মাংস ভেদ করে হাড়ে এসে পীড়ন দিয়ে যায়। অথচ, এতো ঠান্ডায় এরা এখানে এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। গাড়িতে ফিরতে যাবো। ঠিক এমন সময় জীবনের এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো। ছেলেটি আমার হাত ধরে রাখলো। স্ট্রীট লাইটের আলো চারদিকে ছড়িয়ে আছে। সেই আলোয় ছেলেটির চেহারা আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি। ছেলেটি আমার জুতোর ওপর দাঁড়াবার চেষ্টা করলো। আমি পা সরিয়ে নিলাম। ছেলেটি আবার দাঁড়াবার চেষ্টা করলো। এবার অবাক হয়ে আমি জানতে চাইলাম- খোকা তুমি আর কিছু আমার কাছে চাও ? ছেলেটি বললো -জ্বিনা স্যার। আমি আর কিছুই আপনার কাছে চাইনা। তোমার মাতো কিছুই বলছেন না। উনি কি আর কিছু চান? এরপর ছেলেটি যা বললো - তা শুধু আমাকে জীবনে সুখের সন্ধানই দিলোনা- আমার পুরো জীবনের মিশনটাই বদলে দিলো। ছেলেটি বললো-আপনার মুখটা একটু দয়া করে নীচে নামান। আমি আপনার চেহারাটা একটু ভালো করে দেখে আমার মনের মাঝে এঁকে নিতে চাই। স্বর্গে আপনাকে দেখলেই যেন আমি চিনতে পারি আর এই প্রচন্ড শীতের রাতে এক বোবা মা আর তার সন্তানকে এই তীব্র শীত থেকে রক্ষা করার জন্য সৃষ্টিকর্তার সামনে যেন আপনাকে আরেকটিবার ধন্যবাদ জানাতে পারি।

0 comments:

Post a Comment