মেডিটেশন মানুষকে কীভাবে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভালো থাকতে হয় সেই শিক্ষা দেয়। মেডিটেশনের কাজ যেহেতু মন দিয়ে, তাই প্রথমে মনকে বুঝতে হলে, মনকে অনুধাবন করতে হলে, মনকে সঠিকভাবে ব্যবহার শিক্ষতে হলে বা মেডিটেশন চর্চা করতে হলে প্রথমেই মনকে বুঝতে হবে।
আজ আমরা মন সম্পর্কে কিছু কথা বলব।
মনের অবস’ান শরীরের মধ্যে কোথায় আছে আমরা জানি না, মনের কোনো নির্দিষ্ট আবাসস’ল নেই।
শরীর ও মনের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য হচ্ছে মন স্বাধীন এবং নিয়ন্ত্রণহীন। মন সে তার ইচ্ছামতো চলতে ফিরতে চায়।
অপর দিকে শরীর পরাধীন এবং নিয়ন্ত্রিত। তার নিজস্ব কোনো ইচ্ছা বা আকাঙ্খা নেই।
শরীর ও মন-এর যৌথ উদ্যেগেই একজন মানুষের জীবনের আশা আকাঙ্খা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভালোলাগা-ভালোবাসা, জাগতিক চাওয়া-পাওয়া সব কিছুই পরিচালিত হয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে মন।
যারা মন নিয়ে গবেষণা করেন, তারা লক্ষ করেছেন যে, মনের সাথে মানুষের মসি-ষ্কের এক প্রকার সম্পর্ক আছে। মানুষ যখন রেগে যায় তখন মসি-স্কের মধ্যে এক প্রকার কম্পন তৈরি হয়। মানুষ যখন ঘুমন- অবস’ায় থাকে তখন মসি-ষ্কের মধ্যে এক প্রকার কম্পন তৈরি হয়। তা হলে দেখা যাচ্ছে যে ভিন্ন ভিন্ন মানসিক অবস’ার পরিপ্রেক্ষিতে, মানুষের মসি-ষ্কে ভিন্ন ভিন্ন প্রকারের কম্পন তৈরি হয়।
গবেষকরা একটি সিদ্ধানে- পৌঁছাতে সক্ষম হলো যে, মনের সাথে শরীরের এক বিশাল সম্পর্ক রয়েছে, যা বোঝা যায় মসি-ষ্কের কম্পনের মাধ্য দিয়ে। আগুনের তাপের মধ্য দিয়ে যেমন তাপের শক্তিকে বোঝায়, ঠিক তেমনিভাবে মসি-ষ্কের কম্পনের মধ্য দিয়ে মনের গতিবিধি এবং শক্তিকে বোঝা যায়।
মন যত বেশি শান- থাকবে মসি-ষ্কের কম্পন তত কমবে, মন তত বেশি শক্তিশালী হবে। মন যত বেশি অশান- হবে মসি-স্কের কম্পন তত বাড়তে থাকবে, মন তত বেশি দুর্বল হবে। এটাই মনের ধর্ম বা চরিত্র। মনের বিচিত্র চরিত্রের মধ্য এই দুটো চরিত্রকেই মেডিটেশন-এর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।
প্রতিদিন কিছুটা সময় মেডিটেশনের জন্য ব্যয় করুন।
নিজে ভালো থাকুন, অপরকে ভালো রাখুন।
মেডিটেশন মনের প্রভাব
আজও মন নিয়ে আলোচনা। মোদ্দা কথা হলো যে, মনকে যে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে সে জীবনে সফল হতে পেরেছে। মনকে নিয়ন্ত্রণে আনা খুব যে সহজ বা খুব যে কঠিন তাও বলব না। তবে মেডিটেশনই একমাত্র উপায় যার মাধ্যমে মনকে নিয়ন্ত্রণে এনে বশ করা যায়।
মনের অবস’ান ভেদে মনকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন অতি চেতন মন যাকে গামা লেভেল বলা হয়। চেতন মন অর্থাৎ বিটা লেভেল। অবচেতন মন অর্থাৎ আলফা লেভেল। অচেতন মন অর্থাৎ থিটা লেভেল বলা হয়। এরপরও মনের আর একটি অবস’া আছে যাকে বলে ডেল্টা লেভেল।
কোনো ব্যক্তি যখন অত্যাধিক রাগান্বিত থাকে তখন ঐ অবস’াকে বলে অচেতন বা গামা লেভেল। গামা লেভেল যখন অত্যাধিক বৃদ্ধি পায় তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়ে।
আমরা যখন স্বাভাবিক কাজ কর্ম করি, দৈনন্দিন রুটিন ওয়ার্ক করি, যখন কোনো কাজে তেমন কোনো গভীর চিন-া ভাবনা করতে হয় না, তখন মন যে অবস’ায় থাকে তখন তাকে বলে মনের চেতন অবস’া বা বিটা লেভেল।
মানুষ যখন ঘুমের অবস’ায় থাকে অথবা গভীর চিন-ায় মন যখন নিমগ্ন থাকে, যখন মন কোন সৃষ্টিশীল কাজ করে, মন যখন ভালোবাসা বা ভালোলাগার জগৎ এ থাকে আবেগ অনুভুতি জগৎ জাগ্রত হয়ে থাকে তখন মন যে অবস’ানে থাকে তাকেই বলে অবচেতন মন বা আলফা লেভেল। আলফা লেভেলকে বলা হয় সৃষ্টির জগৎ। মানুষ যা কিছু আবিষ্কার করে তা ঐ আলফা লেভেলে গিয়েই করে থাকে।
মানুষের অনুভুতি যখন লোপ পায় অর্থ্যাৎ সেনসিং পাওয়ার যখন কমে যায় তখন সেই অবস’াকে বলে অচেতন অর্থ্যাৎ থেটা লেভেল।
এর পরের আরেকটি অবস’া থাকে যাকে বলে ডেল্টা লেভেল, এই অবস’ায় মসি-ষ্কের কম্পন প্রায় শূন্যের কাছাকাছি চলে যায়।
আমরা যদি একটু খেয়াল করি তাহলে দেখব যে মনের বিভিন্ন অবস’ার মধ্যে অবচেতন অর্থাৎ আলফা লেভেল মানুষের জন্য খুবই উপকারী এবং কার্য্যকরী।
মেডিটেশন চর্চার জন্য এই আলফা লেভেলকেই প্রধানত ব্যবহার করা হয়।
আগামীতে আলফা-লেভেল নিয়ে বিস-ারিত আলোচনা করব।
কিছুটা সময় মেডিটেশনের জন্য ব্যয় করুন।
নিজে ভালো থাকুন, অপরকে ভালো রাখুন।
0 comments:
Post a Comment